শিশু জন্মাবার পর থেকেই যখন সে তার প্রিয়জনের দিকে তাকায় তখন থেকেই তার জানার ইচ্ছে প্রবল থেকে প্রবলতর হয়। এই সময় মা-বাবা বা অভিভাবকদের সব সময় শিশুর জেগে থাকা কালীন তাকে নজরে রাখা এবং তার সাথে মাঝে মাঝে কথাবার্তা বলা, ছড়া শোনানো, গান শোনানো প্রয়োজন। এসব না করে যদি তাদের হাতে বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ তুলে দেওয়া হয় এবং ঘন্টার পর ঘন্টা টিভি দেখতে দেওয়া হয় তাহলে শিশুর ওই সব গ্যাজেটের দিকে আকর্ষণ বেশি রকম বেড়ে যায়। এ থেকেই শিশুরা মোবাইল-ট্যাবলেট-টিভি আসক্ত হয়ে উঠতে থাকে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে শিশুদের মোবাইল আসক্তির কারণে বুদ্ধির বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে না এবং তারা সহজে মানুষের সাথে মিশতেও পারছে না। ধীরে ধীরে তারা নিজেদের জগতে বাস করতে শুরু করে এবং পরবর্তীকালে একাকীত্বে ভোগে। সারাক্ষণ বসে থাকার কারণে তাদের মোটা হয়ে যাওয়া আটকানো যায় না। যার ফলে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া চোখের মারাত্মক রকম ক্ষতি করে এই ধরনের ডিভাইস। তাছাড়া মোবাইলের রেডিয়েশন ক্যান্সার সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।
শিশুদের মোবাইল আসক্তি দূর করার উপায়:-
১) ফোন বা টিভি থেকে আসক্তি দূর করার জন্য যদি শিশুদের একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয় তাহলে খুব ভালো হয়। যেমন সপ্তাহে এক থেকে দু’বার সে গেমস খেলতে পারবে এবং তা কখনোই যেন এক ঘন্টার বেশি না হয়। (অবশ্যই ফোনের নেট কানেকশন বা ওয়াইফাই বন্ধ রেখে)
২) মা-বাবা উভয়কেই শিশুদের জন্য আলাদা করে সময় বার করা প্রয়োজন। কিছুটা সময় তাদের সাথে গল্প করা, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, সম্ভব হলে বাড়ির বাইরে গিয়ে বা বারান্দায় তার সাথে নানান রকম খেলায় নিজেদের যুক্ত করা।
৩) বিভিন্ন রকমের কাজে যেমন বিভিন্ন রকম মশলা, চাল ডাল, শাকসবজির সাথে ধীরে ধীরে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। কখনো কখনো বিভিন্ন রকম মশলাগুলোকে মিশিয়ে দিয়ে আলাদা করতে বলা। সবজির রং অনুযায়ী আলাদা আলাদা পাত্রে তুলে রাখা আবার মেশানো। আদা, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ এসবের গন্ধ আলাদা আলাদাভাবে চেনানো। আটা মাখিয়ে তা থেকে বিভিন্ন রকমের আকৃতির বস্তু তৈরি করার প্রতি আকৃষ্ট করা প্রভৃতি।
৪) ছোটো থেকেই বিভিন্ন রকম সৃজনশীল কাজ যেমন আঁকা, নাচ, গান, আবৃত্তি, বই পড়া ও বইয়ের ছবি দেখে দেখে সেগুলির নাম বলতে পারা এবং সেগুলি কি কাজে লাগে তা জানা।
৫) যেসব শিশুরা ফোন অ্যাডিক্টেড হয় তাদের কোনো রকম খেলাধুলার প্রতি আকর্ষণ থাকেনা। তাই ছোটো থেকেই শিশুদের ধীরে ধীরে বাইরে নিয়ে যাওয়া এবং কোনো স্পোর্টস ক্লাবে যথা ফুটবল বা ক্রিকেট কোচিং সেন্টার, অ্যাথলেটিক্স, জুডো, ক্যারাটে, সাঁতার শেখানোর সেন্টার, যোগব্যায়াম সেন্টার, ইত্যাদিসহ উপযুক্ত পরিকাঠামোসহ উন্নত শিশু শিক্ষালয়ে ছোটোদের সংযুক্ত রাখা খুবই প্রয়োজন।
৬) ছোটো থেকেই বাড়িতে টবে কেমনভাবে বিভিন্ন রকম ফুল গাছ বা সবজি গাছ করা যায় সে সম্পর্কে ধীরে ধীরে তারমধ্যে আগ্রহ গড়ে তোলা দরকার এ জন্য সর্বাগ্রে মা-বাবাকেও এই বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
৭) সম্ভব হলে ছোটো থেকেই কাছে-দূরে বিভিন্ন জায়গায় যেখানে মনোরম পরিবেশ রয়েছে সেই সকল স্থানে ছোটোদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এই বয়স থেকেই পাহাড়-পর্বত, নদনদী, সমুদ্র, জঙ্গল, ধানের ক্ষেত, কাশবন প্রভৃতি শিশুর মনে দীর্ঘকালীন অকৃত্রিম এক ভালোলাগা ও ভালোবাসা তৈরি করে যা তার পরবর্তী জীবনে ছাপ ফেলে যায়।