শিশু খেতে চাইছে না?

“শিশু খেতে চাইছে না? বাচ্চার মন খারাপ? শিশু ভীষণ বায়না করছে ? ...

বেশিরভাগ সময়ই এইসব সমস্যার একটাই সহজ সমাধান, চলিয়ে দাও টিভি। বােকাবাক্সের ছােটা ভীম, ডােরেমনের কীর্তির দিকে তাকালেই বাচ্চা শান্ত। আর তাকে বাগে আনার এমন অবাক করা জাদুতে মশগুল অভিভাবকদের সিংহভাগ। তবে শুনে রাখা দরকার, দীর্ঘক্ষণ টিভির পর্দায় তাকালে আখেরে বাচ্চার চোখেরই ক্ষতি। তাই আজই সতর্ক হয়ে বাচ্চার চোখের ওপর টিভি দেখার কুপ্রভাব সম্বন্ধে জেনে নেওয়া প্রয়োজন …..

চোখের পাওয়ার

আমাদের দেখার নেপথ্যে মস্তিষ্কের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আর ছােটোবেলাতেই মস্তিষ্ক দেখার অভ্যেস তৈরি করতে ব্যস্ত থাকে। এই বয়সে বাচ্চা কী দেখছে এবং কীভাবে দেখছে, এর উপর নির্ভর করে মস্তিষ্ক চোখের পাওয়ার নির্ধারিত করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে ইমেট্রোপাইজেশন। এবার মুশকিল হল, বাচ্চা দীর্ঘক্ষণ টিভির পর্দায় তাকিয়ে থাকলে মস্তিষ্ক কেবল সামনের জিনিস দেখার জন্যই বার্তা পেতে থাকে। বেশ কিছুদিন এমনটা চললে বেড়ে যেতে পারে বাচ্চার চোখের আয়তন। তখন বাচ্চাটির দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হয়। এই অসুখকে মায়ােপিয়া বা মাইনাস পাওয়ার আসা বলে৷| প্রতিদিনই এই সমস্যায় আক্রান্ত বাচ্চার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হল, গ্রামের তুলনায় শহুরে বাচ্চাদের মধ্যেই এই রােগের প্রকোপ বেশি।  ড্রাই আইজ—“দেখ দেখ, টিভির দিকে কেমন একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। চোখের পাতা পর্যন্ত ফেলছে না৷’ টিভির প্রতি বাচ্চার একাগ্র মনােযােগ দেখে অনেকেই এমন মন্তব্য করে থাকেন। তবে দীর্ঘক্ষণ চোখের পাতা খােলা রাখতে শুরু করলে চোখের কর্নিয়া শুষ্ক হয়ে যায়। এই সমস্যাকেই বলে ড্রাই আইজ। এই রােগে আক্রান্ত বাচ্চার চোখ কড়কড়, চোখে ব্যথা, চোখে। জল ভরে যাওয়ার মতাে সমস্যা দেখা দেয়। জেনে রাখুন, ড্রাই আইজের সমস্যা সাধারণত বড়দের বলেই ধরা হতাে। তবেবাচ্চাদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ টিভি দেখার অভ্যেস চালু হওয়ার পর থেকেই তাদের মধ্যেও এই সমস্যা বাড়ছে। তবে উপায়?

 টিভি দেখা একদম বন্ধ না করলেও রাশ টানতে হবে সময়ে। বাচ্চাকে দিনে ৩০ মিনিটের বেশি টিভির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে। থাকতে দেওয়া যাবে তবে শুধু টিভিকে একা দোষারােপ করা ঠিক হবে না। জুড়তে হবে মােবাইল, ট্যাব ইত্যাদি অত্যাধুনিক যন্ত্রের নামও। বর্তমানে টিভি বাদ দিয়ে এই সবকটি যন্ত্রের ব্যবহারও বাচ্চাদের মধ্যে খুবই বেড়েছে। গেম খেলা, ইন্টারনেট সার্কিং—সবই চলছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু বাচ্চার চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে চাইলে এই সবকটি যন্ত্র  ব্যবহারেও ওই একই সময়, অর্থাৎ ৩০ মিনিট সময় নির্ধারণ করা দরকার। তবে অভিভাবকরা ৩০ মিনিট সময় বেঁধে দিলেই বাচ্চারা সেই নিষেধাজ্ঞা শুনতে যাবে কেন? অভিভাবকরা নিজেই তাে বাচ্চার সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মােবাইল, কম্পিউটারে ব্যস্ত! তাই বাচ্চাকে বলার আগে অভিভাবকদেরও অবশ্যই মােবাইল, ট্যাব ব্যবহার কমাতে হবে।
এখনকার বাচ্চারা বাড়ির বাইরে প্রায় বের হয়ই না। চোখে পড়ে না সূর্যের আলাে। ফলে বাচ্চার চোখে মাইনাস পাওয়ার দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই দিনের বেলা অন্তত এক থেকে দেড় ঘণ্টা বাচ্চাকে মাঠে-বা খোলা জায়গায় খেলতে দেওয়া। স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক এবং শারীরিক লাভ মিলবে।
বাচ্চাকে বাড়ির জানলা দিয়ে দূরের কোনও গাছে বসে থাকা পাখি বা ছাদের কার্নিশে আটকে থাকা ঘুড়ি দেখান। দুরে তাকালে বাচ্চার চোখ ভালাে থাকবে।

ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর মরশুমি ফল, শাক, সবজি খাওয়ার অভ্যেস  রাখা দরকার , দীর্ঘক্ষণ টিভির পর্দায় তাকালে আখেরে বাচ্চার চোখেরই ক্ষতি  তৈরি হবে। 

Leave a Comment