শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ (৩ বছর পর্যন্ত)
শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ কোন্ বয়সে কতটুকু হওয়া উচিত এ সম্পর্কে আমাদের সঠিক একটা ধারণা থাকা প্রয়োজন। সুস্পষ্ট ধারণার অভাবে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঠিকমত হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে মা-বাবা বা অভিভাবকের নজর দেওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বেড়ে ওঠার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ গুলো কে বলা হয় “Developmental Milestones” যা কিনা শিশুর সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠা দিকটাকে নির্দেশিত করে।
৬-৮ সপ্তাহের শিশু:-
সাধারণত জন্মাবার ছয় সপ্তাহ পর থেকে শিশুরা কিছুটা মাথা নাড়ায় এবং দেখে। এ সময় থেকে তাদের ঘাড় একটু একটু করে শক্ত হতে শুরু করে। পরিচিত মুখের দিকে তাকিয়ে হাসতে পারে এবং “আ”, “ও” এই ধরনের উচ্চারণ করে।
৪ মাস - ৬ মাস:-
এসময় শিশুরা মুখে নানা রকম আওয়াজ ছাড়া “মা”, “বা’, “না” এই ধরনের শব্দ উচ্চারণ করতে শেখে।
৬ মাস - ৮ মাস:-
এই বয়সে শিশুরা পাশ ফেরা, উল্টে যাওয়া এবং পিছনে কোনো সাপোর্ট অর্থাৎ বালিশ জাতীয় কিছু দিলে ধীরে ধীরে বসতে শেখে। ধীরে ধীরে উল্টে গিয়ে হামাগুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। খেলনা নিয়ে সেটা বোঝার চেষ্টা করে।
১২ মাস - ১৮ মাস :-
এ বয়সে শিশুরা হাততালি দেওয়া, বাই বাই করা, দাঁড়াতে শেখা এবং মা-বাবা বা পরিচিত জনের কাছ থেকে শুনে শুনে ছোটো ছোটো শব্দ বলতে শেখে। আঙ্গুল দিয়ে কোনো কিছু দেখালে সে দিকে তাকায় বা কেউ মুখে আওয়াজ করলে সেদিকে তাকাতে শেখে। এছাড়া ধীরে ধীরে হামাগুড়ি অবস্থা থেকে দাঁড়াবার চেষ্টা করে এবং অনেকেই দাঁড়াতে শিখে রায়। বিভিন্ন রকম খেলনা নিয়ে খেলতে শেখে।
১৮ মাস - ২৪ মাস :-
এই বয়সের শিশুরা হাঁটতে পারা, কিছু বললে বুঝতে পারা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন চোখ, নাক, কান, পেট, চুল, পা-হাত আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে পারে। ধীরে ধীরে কথা বলতে শেখে। বিভিন্ন খেলনা নিয়ে খেলে। একই খেলনা নিয়ে কয়েক দিন অথবা ৭/৮ দিন খেলার পর সেটিকে নিয়ে আর খেলতে চায় না। কখনো কখনো এক-দু মাস পরে সেই একই খেলনা আবার দিলে দু-একবার নেড়েচেড়ে দেখে এবং খেলে।
২ বছর - ৩ বছর:
কথা বলতে পারা অন্যের কথা বুঝতে পারা, নিজের নাম বলতে পারা, বাড়ির লোকেদের চেনা ও তাদের নাম ধীরে ধীরে বলতে পারা, রং চিনতে পারা এবং নির্দেশ অনুযায়ী কিছু কিছু কাজ করতে পারে। সমবয়সীদের সাথে খেলতে শেখা এবং নাম বললে তাদের চিনতে পারে।
শিশুকে শেখালেই শিখবে:
শিশুরা আসলে অনুকরণপ্রিয়। তারা দেখে দেখে শেখে, শুনে শুনে শেখে। হাজারো প্রশ্ন থাকে তার মনে ও অবাক বিস্ময় নিয়ে দেখে এই পৃথিবীটাকে। এক্ষেত্রে পরিবারের বড়োদের সচেতনতা খুব বেশি প্রয়োজন। শিশু তার মায়ের কাছ থেকে, বাবার কাছ থেকে, পরিবারের অন্যদের কাছ থেকে এবং শিক্ষকের কাছ থেকে সে কিছু না কিছু শেখে। তার চারপাশের মানুষের কাছ থেকে শিখতে চায় বলে সবাইকে শিশুর সামনে সচেতন ভাবে চলাফেরা করা প্রয়োজন। শিশুকে বলা হয় “কাদামাটি”। তাকে যেভাবে গড়া প্রয়োজন সেভাবেই তাকে গড়ে তোলা দরকার। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প নেই।
মা-বাবা দুজনের পাশে থাকা খুবই জরুরি।
শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে মা-বাবা দুজনের পাশে থাকা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে একটা বিষয় উল্লেখ করা দরকার মায়ের স্পর্শ শিশুকে ভবিষ্যতে মানসিকভাবে দৃঢ় করে এবং মানবিক হয়ে উঠতে খুবই সাহায্য করে।
বিদ্যালয়ে পাঠাবার প্রস্তুতি নেওয়া
২ থেকে ৩ বছর বয়সেই শিশুকে বিদ্যালয়ে পাঠাবার প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। ধীরে ধীরে অন্য শিশুদের সাথে বিশেষ করে সমবয়সীদের সাথে তার খেলা করা, মজা করা, একসাথে কোনো কাজ করা এ সময় খুবই প্রয়োজন।