শিশুর প্রথম স্কুল
শিশু কোন্ বয়সে স্কুলে যাবে
এটা অনেকটাই নির্ভর করে তার মা-বাবা এবং পাশাপাশি প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপলব্ধতার উপর। এক একজন অভিভাবক এক এক ভাবে তার শিশুকে প্রতিপালন করেন তার আর্থিক, সামাজিক অবস্থান ও নিজস্ব ধ্যান ধারণা রুচি অনুযায়ী। প্রতিটি শিশুরই স্বভাব ও ব্যক্তিত্ব ভিন্ন ভিন্ন। শিশু কখন স্কুলে যাবে তা একান্তভাবেই নির্ভর করে তার মা-বাবা তাকে স্কুলে পাঠাতে প্রস্তুত কিনা। সাধারণত বাচ্চারা আড়াই তিন বছর বয়স থেকে প্রাক প্রাথমিক স্কুলে যাওয়া শুরু করে। এক্ষেত্রে প্রায় সময় লক্ষ্য করা যায় মায়ের আগ্রহেই শিশু স্কুলে ভরতি হয়। স্কুলে যাবার পর প্রথম যে সমস্যাটা দেখা দেয় সেটা হল অধিকাংশ বাচ্চাই প্রথম কিছুদিন যাওয়ার পর স্কুলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং স্কুলে যাওয়ার একটা অনীহা তৈরি হয়। কখনো কখনো সে কান্নাকাটিও করে। তবে এটা লক্ষ্য করা গেছে যে কম বয়সে অর্থাৎ আড়াই-তিন বছরের শিশুরা বিদ্যালয়ে গেলে সাধারণত ৪/৫ বছরে যাওয়া শিশুদের তুলনায় অনেক অনেক কম কান্নাকাটি করে, কোনো কোনো শিশু তো একেবারেই কান্নাকাটি করে না।
স্কুলে ভরতি
স্কুলে ভরতি করার অন্তত এক-দু মাস আগে থেকে এ ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক হয়ে শিশুকে বারে বারে স্কুল সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করে দিতে পারেন মা-বাবারা। নাচ, গান, খেলাধুলা সহ সেখানে যে নতুন একটা জগৎ রয়েছে সে ব্যাপারে শিশুকে গল্পের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করানো ভীষণ ভাবে জরুরি। অর্থাৎ স্কুলে পাঠাবার আগে স্কুল সম্পর্কে শিশুর মনে যাতে কোনোরকম ভীতি তৈরি না হয়, সে সম্পর্কে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। এই সমস্ত দিক বিশ্লেষণ করে কতকগুলি সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ করলে শিশুরা খুব সহজে বিদ্যালয় পরিবেশকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করতে পারে এবং ভবিষ্যতে স্কুল সম্পর্কে তার ভালবাসার একটা জায়গা তৈরি হয়।
১) বিদ্যালয়ে পাঠাবার অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন রকম শিশুদের উপযোগী বই-এর সাথে শিশুর সম্পর্ক স্থাপন করা ভীষণই জরুরি।
২) স্কুলের সময় সীমা অনুযায়ী শিশুকে প্রস্তুত করা প্রয়োজন। অর্থাৎ সকালে স্কুল হলে আগের দিন রাতে নিয়ম করে তাড়াতাড়ি শিশুকে ঘুম পাড়াবার ব্যবস্থা নেওয়া খুব দরকার। মা-বাবা দেরি করে যে বাড়িতে ঘুমোতে যান স্বাভাবিকভাবেই একই ঘরে থাকলে শিশু দেরি করে ঘুমাবে। সুতরাং এ ব্যাপারে নজর দেওয়া জরুরি।
৩) সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর হাতে খানিকটা সময় রেখে শিশুকে অবশ্যই ব্রেকফাস্ট দেওয়া উচিত। পারলে আগের দিন রাতে কিছু হালকা খাবার বানিয়ে রাখা যেতে পারে তা না হলে সকালে গরম গরম কিছু তৈরি করে শিশুকে অল্প করে হলেও খাইয়ে স্কুলে পাঠানো দরকার। তার কারণ খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো না করলে শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘ্যান ঘ্যান করে বা তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়।
৪) বিদ্যালয়ে পাঠাবার আগে থেকেই শিশুকে সামাজিক ভাবে মেলামেশা করানো অর্থাৎ পার্কে নিয়ে যাওয়া, বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, অন্যান্য সমবয়সী বন্ধুদের সাথে মিশতে দেওয়া প্রয়োজন। তার কারণ বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ পরিবারই মা বাবা ও তার সন্তানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠার ফলে শিশু ভীষণভাবে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। এটা কাটানো প্রয়োজন।
৫) বাবা-মা যতই ব্যস্ত থাকুক না কেন সময় বের করে শিশুদের সাথে স্কুলে যাওয়া আসার পরে তা নিয়ে পজেটিভ আলোচনা করা ও ভালো ভাবে শিশুর মন তৈরি করার জন্য সব বন্ধুকে নিয়ে চলার পরামর্শ বারে বারে দেওয়া উচিত। কোনোমতেই কোনো শিশু বা শিক্ষক সম্পর্কে কোনো রকম মন্তব্য শিশুর সামনে করা কখনই উচিত নয়। তাহলেই শিশু ধীরে ধীরে তার আপন জগত তৈরি করতে গিয়ে বিদ্যালয় এবং বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকা সেখানকার পরিবেশ সেখানকার চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ, ব্ল্যাকবোর্ড সবকিছুকে আপন করে নিতে পারবে।