মৈত্রী দিবস । Friendship Day

    রাখি উৎসব আমাদের কাছে মৈত্রী দিবস। এটা এমন একটি অনুষ্ঠান যেখানে ভাই, বোন, বন্ধু একে অপরের হাতে রঙিন সুতো বেঁধে দিয়ে স্নেহ, ভালোবাসার বন্ধনকে আরোও দৃঢ় করার প্রতিজ্ঞা নেওয়া হয়।

   কিংবদন্তি অনুযায়ী আজ থেকে প্রায় ২৩০০ বছর আগে আলেকজান্ডার যখন ভারত আক্রমণ করার জন্য ভারতে এসে পৌঁছান, সে সময় ভারতের পরাক্রমী রাজা ছিলেন পুরু। তাঁর বীরত্ব ও সাহসিকতার খবরে আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোজানা শঙ্কিত হয়ে ওঠেন। তিনি ভারতীয়দের রেওয়াজ অনুযায়ী একটি পবিত্র সুতো পাঠিয়ে পুরুকে অনুরোধ করেন আলেকজান্ডারের ক্ষতি না করার জন্য। পুরু রাখিকে সম্মান করতেন। তিনি যুদ্ধে আলেকজান্ডারকে আঘাত করেন নি।

   আর একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহ চিতোর আক্রমণ করলে চিতোরের রানি কর্ণবতী মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে একটি রাখি পাঠিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করেন। সম্রাটের সৈন্যবাহিনী আসার আগেই বাহাদুর শাহের সৈন্যবাহিনী চিতোর দখল করে নেয়। রানি প্রায় ১৩ হাজার পুর নারীকে নিয়ে জহরব্রতের মধ্য দিয়ে আত্মাহুতি দেন। সম্রাট হুমায়ুন চিতোরে পৌঁছে বাহাদুর শাহকে পরাজিত করে রানি কর্ণবতীর পুত্ৰ বিক্রমজিৎকে সিংহাসনে বসান।

   বাংলায় রাখিবন্ধন উৎসব পালনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগ দৃষ্টান্তমূলক। আমাদের দেশ তখন বৃটিশদের অধীনে শাসিত। ১৯০৫ সালের ২০ জুলাই বাংলার ভাইসরয় লর্ড কার্জন ঘোষণা করেন বাংলাকে পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি ভাগে ভাগ করবেন। এর উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন ভারতে বাঙালিদের শক্তিকে খর্ব করা। এর প্রতিবাদে সারা বাংলা সোচ্চার হয়ে ওঠে। শুরু হয় ‘বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন

   এই বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে তিনি বাংলার সকল মানুষকে আহ্বান জানান একে অপরের হাতে রাখি বেঁধে দেওয়ার জন্য। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ধ্বনিত হয়েছিল ঐক্যের সুর আর বিভেদের তীব্র প্রতিবাদ।

   রাখি বন্ধনের মধ্য দিয়ে অসংখ্য বাঙালি হৃদয়ে জাগ্রত হয়েছিল মিলনের সুর, জাতীয়তাবোধ। কবির সঙ্গে তারা যোগদান করেছিল প্রতিবাদী শোভাযাত্রায় ৷ কবির রচিত গান গেয়ে তারা বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল… ‘বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক…’

Leave a Comment